কসাই বনাম অ্যানালিটিক ফিলোসফার

Hassan uz-Zaman
2 min readNov 11, 2019

শহর থেকে একটা প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হল। গোস্ত কাটার প্রতিযোগিতা। একরান গরুর মাংসকে কে সবচেয়ে ভাল সাইজ করতে পারে। বিচারক বিখ্যাত বাবুর্চি রমজান আলী। প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেন দু’জন- প্রথমজন কসাই, দ্বিতীয়জন অ্যানালিটিক ফিলোসফার।

প্রথমে এগুলেন দার্শনিক। সদ্য কেটে আনা একটা আস্ত রান তার সামনের টেবিলে শোয়ানো।

দার্শনিকের পরনে সিল্কের পাঞ্জাবি। প্যান্টের ইস্ত্রির ভাঁজগুলো যত্নের পরিচয় দিচ্ছে। টেবিলের এক কোণে তার চামড়ার ব্যাগটা রাখা ছিল। সেটা খুলতেই সবার চোখ ধাঁধিয়ে গেল- একসেট স্ক্যালপেল মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করছে। দেখেই যেন হাত কেটে যেতে চায়, এমনই তাদের ধার।

দার্শনিক পাঞ্জাবির হাতা সন্তর্পনে ভাঁজ করে সাবধানে একটা স্ক্যালপেল হাতে নিলেন। রানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে আস্তে করে প্রথম টানটা দিলেন- একদম নিখুঁত সরলরেখায় টান, ভদ্রলোকের চোখে যেন স্কেল ফিট করা।

রানের মাংসে একের পর এক টান পড়তে থাকল। প্রত্যেকটিই অসাধারণ যত্নে দেওয়া, প্রত্যেকটিই নিখুঁত। স্ক্যালপেলের মালিকের কনফিডেন্সের তুলনা নেই।

ঘন্টাখানেক পরে দার্শনিকের কাজ শেষ হল। স্ক্যালপেলটাকে সযত্নে মুছে চামড়ার কেসে ঢুকিয়ে রাখলেন।

এরপর এগুলেন কসাই। তার জন্য বরাদ্দ রানটা পাশের আরেকটা টেবিলে রাখা। কসাইয়ের পরনে স্যান্ডো গেঞ্জি আর লুঙ্গি। সাদা গেঞ্জির ওপর রক্তের খয়েরি ছোপ দেখা যাচ্ছে।

কসাই এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করলেন না- রানের ওপর দা দিয়ে বসালেন এক কোপ। কিছু চর্বি আর মাংস উড়ে গিয়ে পড়ল এখানে সেখানে। কিছু পড়ল তার মুখে। ভদ্রলোকের তোয়াক্কা নেই, তিনি কোপের পর কোপ বসাতে ব্যস্ত। পুরো রানটাকে সাইজ করতে তার লাগল মিনিট দশেক।

বিচারক রমজান আলী টেবিল দু’টোর দিকে একপলক দেখে কসাইকে বিজয়ী ঘোষণা করে দিলেন। চারদিকে ব্যাপক তালিয়া।

দার্শনিকের বিস্ময়ের কমতি নেই। তালিয়া শেষ হলে বিচারককে তিনি বললেন- স্যার, আপনি টেবিলদু’টো ভালমত দেখেছেন তো? কসাইয়ের টেবিলের অবস্থা দেখুন- বিভিন্ন সাইজের মাংস এদিক ওদিক স্তূপ করে রাখা। চারদিকে হাড়ের টুকরো আর রক্তের দাগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

এবার দেখুন আমার টেবিল- রীতিমত ইন্সটাগ্রামে দেওয়ার মত। মাংস একদম নিখুঁতভাবে কিউব করে কাটা, কোনটার সাথে কোনটার সাইজের বেশকম নেই। ব্যাটা কসাই এই প্রাইজ পায় কী বিবেচনায়?

রমজান আলী বিরক্ত। পাঞ্জাবিঅলার সাথে কথা বলতে গিয়ে নেক্সট খ্যাপ মিস দেওয়ার ইচ্ছা তার নেই।

বিরস মুখে তিনি বললেন- দেখুন, কসাইয়ের কাটা মাংসগুলো হাজারটা কাজে ব্যবহার করা যাবে। কোন টুকরো দিয়ে স্টেক, কোন টুকরো দিয়ে রোস্ট, হাড়অলা টুকরো দিয়ে নেহারি, অবশিষ্টাংশের স্তুপ দিয়ে কাবাব। বোঝাই যাচ্ছে উনি খুব ভালভাবে জানেন মাংসের জয়েন্টগুলো কোথায়, হাড় কোথা থেকে কোন পর্যন্ত, হাড়ের কাছের শক্ত অংশে কীভাবে দা বসাতে হয়।

অন্যদিকে আপনি এত সুন্দর একটা রানের মাংসকে এমন ছোট টুকরো করেছেন, যে এটা দিয়ে বড়জোর খানিক স্টু ছাড়া আর কিছুই বানানো যাবে না।

নীতিকথা: মাংস কাটার সময় শুধু সারফেস বা উপরিভাগ নিয়ে ভাবলে চলবে না, বরং তার নিচে কী আছে সেটা নিয়েও জ্ঞান রাখতে হবে।

একই কথা প্রযোজ্য দর্শনশাস্ত্রের ক্ষেত্রেও।

— — — — — — — — — — — — — —

মূল: পল উলফের The Parable of the Butcher and the Analytic Philosopher। পড়ুন এখানে https://robertpaulwolff.blogspot.com/2015/03/the-parable-of-butcher-and-analytic.html?fbclid=IwAR1jv0vgz9_QDxMzo--DP1jm9NWBfWRbaXduP5z-HHyP5hQmT1ZB490iteA

Sign up to discover human stories that deepen your understanding of the world.

Free

Distraction-free reading. No ads.

Organize your knowledge with lists and highlights.

Tell your story. Find your audience.

Membership

Read member-only stories

Support writers you read most

Earn money for your writing

Listen to audio narrations

Read offline with the Medium app

Hassan uz-Zaman
Hassan uz-Zaman

Written by Hassan uz-Zaman

Husband, biologist, philosophy enthusiast, nothing else much besides. In pursuit of happiness and understanding.

No responses yet

Write a response